জুরুরি মাসআলা - মাসায়িল প্রশ্ন ও উত্তর প্রথম পর্ব
![]() |
দৈনন্দিন জুরুরি মাসআলা - মাসায়িল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রঃ নামাজের মধ্যে মোবাইল ফোন বেজে উঠলে করণীয় কি?
উঃ প্রতিটি মুসল্লির জন্য কর্তব্য মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা। জামাতে নামাজ আদায়কালীন সময় মোবাইল বেজে উঠলে সকলের নামাজের ধ্যান খেয়াল নস্ট হয় যা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও গোনাহের কাজ। সুতারাং এমতাবস্থায় সম্ভব হলে এক হাত দিয়ে মোবাইল বন্ধ করবে। আর যদি তা সম্ভব না হয় তবে নামায ছেড়ে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে নতুন নিয়ত বেধে নামাযে শরীক হবে।
প্রঃ নামাযের মধ্যে দুনিয়াবী চিন্তা মনের মধ্যে স্বভাবতই এসে যায়, এমতাবস্থায় করণীয় কি?
উঃ নামাযের মধ্যে দুনিয়াবি চিন্তা এসে গেলে সাথে সাথে মনকে নামাযের প্রতি রুজু করতে হবে এবং প্রতি রোকনে তিনবার এই কথা মনে মনে স্মরণ করবে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেখছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার সবকিছু শুনছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার অন্তরের খবরও জানেন। আর অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে কিরাত পাঠ করলে নামাযের প্রতি অধিক মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
প্রঃ বেনামাযিকে পৃথীবিতে যে পাঁচ প্রকার শাস্তি ভোগ করতে হয় উহা কি?
উঃ বেনামাযিকে পৃথীবিতে যে পাঁচ প্রকার শাস্তি দেয়া হয় নিন্মরুপ
(১) জীবনের বরকত কেড়ে নেয়া হয়।
(২) চেহারা হতে নেককারদের জ্যোতি মুছিয়া ফেলা হয়।
(৩) তার কোন দোয়া কবুল হয় না।
(৪) বুজুর্গ ব্যক্তিদের দোয়া হইতে সে কোন ফল লাভ করে না।
(৫) যে আমলই সে করুক না কেন উহার কোন প্রতিদান পায় না।
প্রঃ কোন্ নামায জীবনে একবার হলেও আদায় করতে হয়?
উঃ সালাতুক্তাছবিহের নামায।
প্রঃ হুযুর (সঃ) এর নিকট প্রিয় তিনটি জিনিস কি ছিল?
উঃ হুযুর (সঃ) এর নিকট প্রিয় তিনটি জিনিস হলঃ সুগন্ধি, নারী এবং নামায ।
প্রঃ আল্লাহর নিকট বান্দার তিনটি আমল প্রিয় উহা কি?
উঃ আল্লাহর নিকট বান্দার তিনটি প্রিয় আমল হল-
(১) জান- মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় শক্তি ব্যয় করা।
(2) বাপের জন্য অনুতপ্ত হইয়া ক্রন্দন করা।
(৩) অন্ন কস্টের সময় ধৈর্য্য ধারণ করা।
প্রঃ নামাযে দাঁড়িয়ে কেরাত পাঠ করলে কি সাওয়াব পাওয়া যায়?
উঃ নামাযে দন্ডায়মান অবস্থায় কেরাত পাঠ করলে প্রতি অক্ষরে একশত নেকী পাওয়া যায়।
প্রঃ রুকুতে গেলে কি সাওয়াব হয়?
উঃ নামাজী যখন রুকুতে যায় তখন তার নিজের শরীরের ওজন সমপরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় সদকা করার সওয়াব প্রাপ্ত হয়।
প্রঃ সেজদায় কি সওয়াব পাওয়া যায়?
উঃ সেজদায় গেলে সমস্ত জীন ও ইনসানের সংখ্যা বরাবর সাওয়াব পাওয়া যায়।
প্রঃ কোন কোন ব্যক্তির নামায মাথার অর্ধহাত উপরে উঠে না অর্থাং কবুল হয় না?
উঃ এক জায়গায় বর্ণিত আছে দুই ব্যক্তির নামায কবুল হয় না।
১ম হল স্বামীর অবাধ্য স্ত্রী।
২য় হল মনিব হইতে পলায়নরত গোলাম।
প্রঃ কোন কোন কাজে বিলম্ব করতে নেই?
উঃ চারটি কাজে বিলম্ব করতে নেই-
১) নামায যখন সময় হয়ে যায়।
২) জানাযা যখন প্রস্তূত হয়ে যায়।
৩) বিবাহ উপযুক্ত কন্যার জন্য উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যায়।
৪) ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করতে নেই।
প্রঃ কবরে যে তিনটি প্রশ্ন হবে সেগুলি কি?
উঃ কবরে তিনটি প্রশ্ন হল-
১) তোমার রব কে? আরবিতে مَنْ رَّبُّكَ
২) তোমার দ্বীন কি? আরবিতে وَمَا دِيْنُكَ
৩) মোহাম্মাদ ( সাঃ) সম্পর্কে তোমার অভিমত কি? আরবিতে مَنْ نَبِيُّكَ
প্রঃ হাশরের ময়দানে যে পাঁচটি প্রশ্ন হবে সেগুলি কি?
উঃ হাশরের ময়দানে যে পাঁচটি প্রশ্ন হবে সেগুলি হল-
১) সারাটি জীবন কোন কাজে ব্যয় করিয়াছ?
২) যোবন কাল কোন কাজে ব্যয় করিয়াছ?
৩) মাল দৌলত কিভাবে উপার্জন করিয়াছ এবং
৪) কোন পন্থায় খরচ করিয়াছ?
৫) যে পরিমাণ এলেম অর্জন করিয়াছ উহার উপর কতটুকু আমল করিয়াছ?
প্রঃ পুরুষ এবং স্ত্রী লোকের ইবাদত কবুলের শর্ত কি?
উঃ সকল মুসলমানের জন্য ইবাদত কবুলের শর্ত হল - হালাল রুজী ভক্ষন করা আর বিশেষভাবে মেয়ে লোকদের ইবাদত করুলের জন্য অতিরিক্ত শর্ত হল পর্দায় থাকা।
প্রঃ দোয়া কবুল হওয়ার শর্ত কি?
উঃ হালাল উপার্জন করা অর্থাং খাদ্য ও পরিধেয় বস্ত্র হালাল উপার্জনের হওয়া।
প্রঃ কোন মহিলা পৃথিবীতেই জান্নাতের ফল খেয়েছিলেন?
উঃ হযরত ঈসা (আঃ) এর মাতা হযরত মরিয়ম (আঃ)।
প্রঃ কোন মহিলা মা আছিয়া (আঃ) -এর সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবেন?
উঃ যে মহিলা নিজে দ্বীনের পথে থেকে স্বামিকেও দ্বিনের কাজে সহযোগিতা করে।
প্রঃ পানাহার ছারা আর কি কি কারণে রোজা নস্ট হয়ে যায়?
উঃ পানাহার ও যৌন সম্বোগের দ্বারা যেমন রোজা নস্ট হয়ে যায় তেমনি ভাবে মিথ্যা ও গীবতের কারনেও রোজা নস্ট হয়ে যায়।
প্রঃ ইঞ্জেকশনের দ্বারা রোজার খতি হয় কি না?
উঃ রোজা অবস্থায় রগে বা মাংসে ইঞ্জেকশন নিলে রোজার কোন ক্ষতি হয় না।
প্রঃ ইচ্ছাকৃত রোজা না রাখলে কি শাস্তির কথা বলা হয়েছে?
উঃ বিনা ওজরে রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করলে সারা জীবন রোযা রাখলে ও একটি রোজার সমকক্ষ হবে না।
প্রঃ রোজার কাজা কিভাবে আদায় করবে ?
উঃ যদি শরয়ী ওজর বশতঃ একেবারেই রোজা রাখিতে না পারে তবে একটির পরিবর্তে একটি রোজা রাখতে হবে।
প্রঃ রোজার কাফফারা কি?
উঃ কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় রমজান মাসের রোজা ভাঈিয়া ফেলে তবে একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হইবে। মাঝে দু একটি ভাঈিয়া ফেলিলে কাফফারা আদায় হইবে না আর যদি কেহ কাফফারার রোজা রাখিতে অক্ষম হয় তবে উহার বদলে ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরওয়া খাওয়াইতে হইবে।
প্রঃ সুদ খাওয়ার ভয়াবহ পরিণতি কি?
উঃ হুযু ( সাঃ) ইরশাদ করেন সুদের ৭০টি স্তর রয়েছে। তন্মধ্যে সর্ব নিন্ম স্তর হল মায়ের সহিত জিনা করা। আর এক দিরহাম সুদ খাওয়া ৩৫ বার জিনা করার চেয়ে মারাত্মক।
প্রঃ অন্যায়ভাবে কারো অর্থ আত্মসাৎ করার পরিণতি কি?
উঃ অন্যায়ভাবে কারো এক দানেক অর্থাৎ দু পয়সা আত্মসাৎ করিলে ৭০০ রাকাত কবুল নামায দিতে হবে।
প্রঃ যাকাত আদায় না করার শাস্তি কি?
উঃ যাকাত আদায় না করিলে সেই সম্পদ সর্পাকারে তাকে দংশন করিবে। এবং স্বর্ণ রৌপ্যের যাকাত না দিলে চোহারা ও পিঠে উক্তপ্ত করে দাগ দেয়া হবে।
প্রঃ অন্যায়ভাবে কারো জমি দখল করার পরিণতি কি ?
উঃ অন্যায়ভাবে কারো জায়গা দখল করলে অর্ধহাত জায়গার জন্য অর্ধহাত পরিমান সাত স্তবক জমিনের মালা গলায় পরাইয়া দেওয়া হইবে।
প্রঃ সমার্থ থাকা সক্ত্বেও কেউ যদি হজ না করে তার শাস্তি কি?
উঃ এমন ব্যক্তি ইহুদী খৃস্টান হয়ে মৃত্যু বরণ করবে এবং কেয়ামতের দিন তার কপালে কাফের শব্দ থাকবে।
প্রঃ সবচেয়ে বড় কোনটি?
উঃ শিরিক এবং কুফর ।
প্রঃ শারীরিক পরিশ্রম লাঘবের জন্য কি আমল করতে হয়?
উঃ শারীরিক পরিশ্রম লাঘবের জন্য শোয়ার সময় তাছবিহে ফাতেমী পড়তে হয়।
প্রঃ কোন দুরুদ শরীফ পাঠ করলে ৮০ বৎসরের গুনাহ মাফ হয়?
উঃ জুমআর দিন আছরের পর "আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ও আলিহি ওবারিক ওসাল্লিম তাছলিমা" ৮০ বার পাঠ করিলে।
প্রঃ কোন সুরাকে কোরানের মা বলা হয়?
উঃ সুরায়ে ফাতিহা কে।
প্রঃ কোন সুরাকে কোরানের দিল বলা হয়?
উঃ সুরায়ে ইয়াসিন কে।
প্রঃ কোন সুরা পাঠ করিলে কবরের আযাব থেকে নাজাত পাওয়া যায়?
উঃ সুরা মুলক প্রতি রাতে পাঠ করিলে।
প্রঃ কোন সুরা পাঠ করিলে অভাব দূর হইয়া যায়?
উঃ প্রতি রাতে সুরা ওয়াকেয়াহ পাঠ করিলে।
প্রঃ কোন সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহপড়া নিষেধ?
উঃ সুরা তওবা।
প্রঃ কোন কোন সুরা পাঠ করিলে যাদু টোনা হইতে মুক্তি পাওয়া যায়?
উঃ সুরা ফালাক ও সুরা নাস।
প্রঃ কোন সুরা পাঠ করিলে দাজ্জালের ফিৎনা হইতে মুক্তি পাওয়া যায়?
উঃ প্রতি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করিলে।
প্রঃ কেয়ামতের দিন নবী ব্যতীত আর কে সুপারিশ করিতে সমার্থ হইবে?
উঃ কোরান মাজিদ।
প্রঃ কোন সুরা সর্ব রোগের ঔষধ?
উঃ সুরা ফাতিহা।
প্রঃ প্রতিদিন ফজরের পর কোন সুরা পাঠ করিলে যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়া হয়?
উঃ সুরা ইয়াসিন।
প্রঃ কোন তাছবিহ আল্লাহর নিকট প্রিয়, মিজানের পাল্লায় ভারী এবং পড়া খুবই সহজ?
উঃ সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম।
প্রঃ কোরান মজিদে সবচেয়ে বড় সূরা এবং ছোট সূরা কোনটি?
উঃ সুরা বাকারা এবং সুরা কাওছার।
প্রঃ কোন দোয়া পাঠ করলে দুঃশ্চিন্তা/ টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়?
উঃ লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ।
প্রঃ কোন কোন ব্যক্তি রমজান মাসেও ক্ষমা পায় না?
উঃ মদখোর, মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান, হিংসুক ও আত্মীয়তা বন্ধন ছিন্নকারী।
প্রঃ চার জিনিসে দিল নস্ট হয় , সেগুলি কি কি?
উঃ ১) আহমকের সাথে মোকাবেলা করা।
(২) অতিমাত্রায় পাপ কাজ করা।
(৩) মেয়েলোকের সাথে বেশী মেলামেশা করা।
(৪) মালদার লোকদের সাথে উঠাবসা করা।
প্রঃ কিভাবে আহার করলে সু্স্থতা বজায় থাকে ও রোগঁ- ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়?
উঃ ক্ষুধা পেলে আহার করা অর্থাৎ ভরা পেটে না খাওয়া এবং উদর পূর্তি করে না খাওয়া। এর জন্য উত্তম পদ্ধতি হলো উদরের এক অংশ খাদ্য, এক অংশ পানি এবং এক অংশ খালি রাখা । এটাই নবীজির বাতানো পদ্ধতি।
প্রঃ শরিয়তের বিধান মতে কাদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ?
উঃ কোরান পাকে বর্ণিত ১৪ প্রকার মাহরাম অর্থাৎ যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ তাদের বর্ণনাঃ
(১) মাতা, সৎমা, নানী, দাদী, পরদাদী যত উপরে হোক।
(২) নিজের মেয়ে, মেয়ের মেয়ের মেয়ে, যত নিচে হোক।
(৩) সহোদরা বোন, সৎবোন।
(৪) ফুফু, সতাল ফুফু।
(৫) খালা, সতাল খালা।
(৬) ভাইয়ের মেয়ে ( ভাতিজি), সৎভাইয়ের মেয়ে এবং এদের মেয়ে যত নিম্নে হোক।
(৭) বোনের মেয়ে ( ভাগনি) , সৎবোনের মেয়ে এবং এদের মেয়ে যত নিম্নে হোক।
(৮) দুধমাতাগন।
(৯) দুধমাতার কন্যাগন, অর্থাৎ দুধ বোন।
(১০) স্ত্রী মাতা অর্থাৎ শাশুড়ি, স্ত্রীর দাদি, নানী যত উপরে হোক।
(১১) পুত্রবধূ ও পুত্রের পুত্র বধূ যত নিম্নেই হোক।
(১২) সহোদরা দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা অর্থাৎ বর্তমান থাকা অবস্থায় অন্য সহোদরাকে বিবাহ করা।
(১৩) ইস্তিরির পূর্ব স্বামীর মেয়ে ও তার মেয়ে যত নিম্নে হোক।
(১৪) কোন স্ত্রীলোকের স্বামী বর্তমান থাকা অবস্থায় তাকে বিবাহ করা অথবা তালাকপ্রাপ্তা কোন নারীকে তার ইদ্দত পালনরত অবস্থায় বিবাহ করা নিষিদ্ধ।
উল্লেখ্য যে যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া স্থায়ীভাবে হারাম তাদের সাথে দেখা করা বৈধ।
মাসআলা-মাসায়েল গুলো ভুল হলে কমেন্ট এ জানাবেন আর যদি প্রশ্ন উত্তর না বুঝেন তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন আমরা আপনাকে কমেন্টে জানিয়ে দিব প্লিজ ।
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ
